১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এ বছর বাংলাদেশ বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। স্বাধীনতা অর্জনের পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে সব থেকে বড় সাফল্য এসেছে কৃষিতে। চার দশক ধরে খাদ্যে ঘাটতি থাকলেও দেশ এখন এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উৎপাদনকারী কৃষকরা।
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে লাল-সবুজের বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলো বাংলাদেশের। এটিকে বাংলাদেশের ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলা যায়, এই অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক মহান মাইলফলক।
সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালটে গেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল এক সময়ে এ অঞ্চলে। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে আমাদের অর্থনীতি। বাংলাদেশেও একটি ছোটখাটো শিল্পবিপ্লব হয়েছে। বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে কৃষি খাতে। করোনার দুঃসময়ে আমাদের রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার বেড়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বেড়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল ফাইন্যান্সের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত এক দশক সময়ে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকলেও ডিজিটাল ফাইন্যান্স তাদের আর্থিক লেনদেনের চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেবার পরিধি শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত হয়েছে। এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো শাখা খোলার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে তাদের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে বেশ তৎপর হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের অনেক অগ্রগতি হয়েছে| স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ সব খাতেই পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় ভালো অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর এক দেশ। আর্থিক ও সামাজিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আরো কিছু সূচকের তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশ অনেকটায় সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছে।
স্বাধীনতার পর দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে এ হার ৪০.৬ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫৮.০৪ শতাংশ, ২০১৯-২০ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩.৩০ শতাংশ, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদানের হার কমলেও মোট অবদান বেড়েছে প্রায় ৬.০ গুণ। দেশের মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বিভিন্ন ফসলের ৯৭২টি জাত ও ১৩৯২টি উন্নত কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এর ফলে দেশের কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি শিক্ষায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জনসংখ্যা ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পেলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। আর কৃষি বিজ্ঞানীদের বিরামহীন প্রচেষ্টা ও কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ ও চা উৎপাদনে চতুর্থ, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং পাট রপ্তানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে।
কৃষিতে সেচযন্ত্রের ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের চাষাবাদ এক সময়ে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে মোট চাষের শতকরা ৯০ ভাগ জমি সেচের আওতায় অর্থাৎ ফসলের প্রয়োজন হলেই সেচের ব্যবস্থা করা যায়। এক্ষেত্রে শ্যালো পাম্প, গভীর সেচ পাম্প, বিভিন্ন আধুনিক সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করে ফসল উৎপাদন করা যায়।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে যান্ত্রিক চাষাবাদ ছিল না বললেই চলে। গরু দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে কৃষক হালচাষ করতো। বর্তমানে পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হারভেস্ট, রিপার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কর্মসূচির ফলে দেশে কৃষি জমি চাষে ৯০%, আগাছা দমনে ৬৫%, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০%, সেচকার্যে ৯৫% এবং ফসল মাড়াইয়ের কাজে ৭০% যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব হয়েছে।
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থানের প্রয়োজনর হচ্ছে। কৃষি জমিতে ঘর বাড়ি বানানোয় কৃষির জমির পরিমাণ কমছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস